ফ্যান-2

0
217
Advertisement

“ও আমার জীবন ।ওকেই আমি ভালোবাসি ।ওর আগে আমার কাছে আর কিছুই নেই ।ওকে সবাই হয়তো ভালোবাসে ।কিন্তু আমি অনেক বেশী ।ও যখন ভালো লোক কেও জ্বালাতন করে ,আমার ভালোলাগে ।ও যখন খারাপ লোক হওয়ার দরুন ভালো লোকের হাতে মরে যায় তখন খুব রাগ হয় ওই ভালো লোক গুলোর উপর ।ও একজনের প্রেমিক ।কিন্তু সবাই ওর মধ্যে নিজের প্রেমিক কে খুঁজে পায় ।ও খারাপ কাজ করেও বুদ্ধি খাটিয়ে পুলিশের সামনে দিয়ে বেড়িয়ে যায় ।ওর পিছনে বারো টা দেশের পুলিশ ছোটে কিন্তু ওকে ধরা টা শুধু মুশকিল নয় ,অসম্ভব ।যখন ওর পিছনে পুলিশ ছোটে তখনো ওকে ভালবাসি ।সে আমার জীবনের বাদশাহ ।আমার শাহরুখ খান ।”- এসব লিখে ডায়েরী টি বন্ধ করলো রিমা ।রেখে এগিয়ে গেলো শাহরুখ খান এর ছবি গুলোর দিকে ।যেগুলো দেওয়ালে লাগানো আছে ।ও নিজেই লাগিয়েছে ।এইসময় ফোন টা বেজে উঠলো ।বিরক্ত হয়ে ফোন টা কেটে দিলো রিমা ।দিনের মধ্যে তিরিশ মিনিট সে এই ছবি গুলোর সাথে সময় কাটায় ।কথা বলে ।গল্প করে ।সব গল্প ।সারাদিনে যা যা ঘটেছে ওর সাথে সব বলতে হয় ।নাহলে ঘুম আসেনা রিমার ।এমন সময় মা এসে আওয়াজ দিয়ে যায় ।ঘুমিয়ে পড় এবার ।উত্তরে রিমা বলে ,

-“মা ,আমাদের এখন সিরিয়াস কথা চলছে ।”

রিমার মধ্যে একটা পোকা যেনো সবসময় কিলবিল করতে থাকে । শাহরুখ পোকা ।যে কেউ যে কোনো প্রশ্ন করলেই সেই পোকা যেনো তাকে কামরায় ।যেমন এই সেদিন , কৃতী ওকে জিজ্ঞেস করলো ,”কিরে ,অ্যাসাইনমেন্ট গুলো করেছিস ?”

উত্তর এলো ,-“না ।”

Advertisement

-“ধরা পড়লে ?”

-“এক বাত হামেশা ইয়াদ রাখনা ,ডন কো পাকারনা মুশকিল হি নাহি ,না মুম্কীন হ্যায় ।”

-“ধূত ।তোর সাথে কথা বলা বেকার ।”

-“Don’t worry darling , বারে বারে কলেজ মে আয়সি ছোটি ছোটি অ্যাসাইনমেন্ট মিলতি রেহতি হ্যায় ।”

তারপর যখন একবার ঋক ওকে ছাড়ার কথা বলেছিলো তখন কাঁদতে কাঁদতে ও বলেছিলো , “মুঝে ঋক সে পেয়ার করনে কে লিয়ে ঋক কি হি জরূরত নাহি ।”

শুনে এবং ওর অভিনয় দেখে ঋক হেসে ফেলেছিলো ।তারপর আর কোনোদিন ওকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেনি ।

এক একটা সিনেমা ও ততবার দেখে যতবার না সিনেমার ডায়লগ গুলো একেবারে ও মুখস্থ করে ফেলে ।তার জন্য ঘরেও ঝামেলা কম হয়না ।রেসাল্ট খারাপ হওয়ার পর ওর মা নিজের হাতে সব ছবি ছিড়ে ,পুড়িয়ে চলে যায় ।কিন্তু রিমা আবার সেগুলো ঠিক জোগাড় করে নেয় ।এই সপ্তাহে রিমা আবার একটা সিনেমা দেখতে যাবে ।”জব হ্যারি মিট সেজল ” ।ঋক এর সাথে ।অন্যান্য প্রেমিক প্রেমিকার মতো ওরা কোনায় বসেনা ।ঘনিষ্ঠ হয়না ।ঋক প্রথম দিকে চেষ্টা করেছিলো ।রিমা কথা শুনিয়ে দিয়েছিলো তখনই ।তারপর ঋক আর সাহস করেনি ।ঋক নিজেও  এই মেয়ে টার জন্য এক সিনেমা বারবার দেখতে থাকে ।অভ্যেস করে নিয়েছে সে এই ব্যপারটা ।

তবে এত আনন্দের ছন্দ পতন হলো একদিন । পঞ্চম বার “জব হ্যারি মিট সেজল “দেখে হল থেকে বেরোনোর পথে হটাত মাথা ঘুরে পড়ে গেলো রিমা ।সাথে সাথেই তাকে নিয়ে ছোটা হলো হাসপাতালে ।খবর পৌছল রিমার বাড়ীতে ।সবাই হাসপাতালে আসলেন ॥ডাক্তার জানালেন ব্রেন টিউমারে ভুগছে রিমা ।অবস্থা এমনই যে অপারেশন দরকার তার ।তাও ডাক্তার পুরোপুরি নিশ্চিত নয় রিমা বেঁচে উঠবে কিনা ।কিন্তু অপারেশন না হলে নিশ্চিত মৃত্যু অপেক্ষা করছে তার জন্য ।সবাই সায় দিলেন রিমার অপারেশনে ।একমাস পর তার অপারেশন ।ঘরে রিমা এখন সম্পূর্ণ বিশ্রামে রয়েছে  এবং তার নায়কের ছবি দেখে সে সময় কাটাচ্ছে ।এমন সময় ঋক তাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে , “মুম্বাই যাবি আমার সাথে ?শাহরুখ খান এর সাথে দেখা করতে ?”

-“বাড়ীতে কি বলবো ?যেতে দেবেনা এই সময় ।”

-“এই সময়েই যেতে দেবে ।আমি আছি তো ।বল যাবি ?”

-“হ্যা যাবো ।”

-“ব্যাস । রেডি থাক ।পরশু যাবো ।”

রিমা জানেনা রিমার বাড়ির লোক ঋকের কথায় কিভাবে মানলো ।কিন্তু যাই হোক ।দুজন রওয়ানা দিলো মুম্বাই ।মান্নত এর উদ্দ্যেশ্যে ।

দীর্ঘ যাত্রা।তারপর অবশেষে দুজন পৌছল মান্নত ।তারিখ টা দুই নভেম্বর ।ওনার জন্মদিন ।একটু পরে এসে ওনার ফ্যান দের সাথে দেখা করবেন ।বাড়ির সামনে প্রচন্ড ভীড় ।পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ভীড় সামলানোর জন্য ।ভিড়ের মধ্যেই গুটি গুটি পা য়ে ফাঁক ফোকর খুঁজে ঋক রিমার হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো ।অবশেষে দেখা মিললো বাদশাহর ।খুশিতে চেঁচিয়ে উঠলো রিমা । -“শা…হ…রু…খ ….. খা….ন । I love you .”কিন্তু ভিড়ের মধ্যে তা আর নায়ক পর্যন্ত পৌঁছায়নি ।অবশেষে নায়ক চলে গেলে রাস্তা ফাঁকা হয় ।সবাই হেটে চলে যায় ।ঋক রিমার সামনে আসে । শাহরুখোচিতো ভঙ্গিমায় দুহাত সামনের দিকে বাড়িয়ে পিছন দিকে একটু হেলে বলে , “Rima ,will you marry me ?”

রিমা অবাক ।সাথে খুব খুশিও ।একসাথে এত সুন্দর ঘটনা ।দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে ঋক কে । জিজ্ঞেস করে , “তুই তো ফ্যান ছিলি না ।”

-“সে ছিলাম না তো ।এক সপ্তাহ লেগেছে এটা একেবারে পারফেক্ট করতে ।”

একমাস পর ,

রিমার অপারেশন শেষ হয় ।রিমা বর্তমানে বিপদ মুক্ত ।ঋক এখন রিমার মতই সব কথায় কোনো না কোনো ফিল্ম এর ডায়লগ দিয়ে উত্তর দেয় ।রিমার ঠোঁটের কোণে তখন হাসি খেলে যায় ।

Advertisement

Leave a Reply