বিরিয়ানি

0
220
Advertisement

বিরিয়ানির লোভে পড়ে প্রপোজ করেছিলাম ।তারপর টানা সাত থেকে আট বছর প্রিয়া আমার টাকার সর্বনাশ করে প্রায় মোটামুটি এক লাখ টাকার বিরিয়ানি গিলেছে।।অবশেষে আসলো বিয়ের পালা ।মনে মনে ঠিক করলাম ,শ্বশুরের টাকায় এবার ইচ্ছে মতো বিরিয়ানি খাবো ।কিন্তু যখন দেখাশোনা শুরূ হলো দুই পরিবারের ,ওই লোক টার নাকি আমাকে পছন্দ হয়নি ।এর থেকে বুঝলাম ,ওই লোকটি কিপটে ।কারণ একটা কিপটে লোক অপর কিপটে লোক কে (যেমন প্রিয়া আমাকে ভাবে ) কখনো পছন্দ করেনা ।নাহলে আর কি কারণ থাকবে আমাকে অপছন্দ করার ॥অবশেষে প্রিয়া এবং তার মা এর জোরাজুরি তে উনি রাজী হলেন এই বিয়েতে ।কিন্তু আমি যতটা আশা করেছিলাম ,এই লোক টা তার থেকেও বেশি কিপটে ।পণ নেওয়া পছন্দ করিনা (পণ চাইলে হয়তো প্রিয়ার বিয়ে অন্য কোথাও হতো ,লোক টা এমন কিপটে ।)কিন্তু শর্ত রাখলাম ,বিয়েতে মটন বিরিয়ানি করতে হবে ।উমা ,সে লোক বলে কিনা ,যে সাদা ভাত করবে ।।না না সেটি হবেনা ।এক্ষেত্রেও প্রিয়ার জোরাজুরি তে মটন বিরিয়ানি হয়েছে ।লোক টা এমন কিপটে যে ওয়াইফাই এর সুইচ বন্ধ করে রাখেন সারাদিন ,যাতে কারেন্ট এর বিল কম আসে ।এরকম লোক আছে বলে মানতাম না কিন্তু যেদিন এনাকে দেখলাম ,বিশ্বাস করুন ইচ্ছে হয়েছিলো সরকার কে আবেদন করে বলি যে ,পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য ঘোষণা করে দিন ।কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেকে আটকে দিয়েছি ।যাই হোক ,বিয়ের দিন ,সারাদিন উপোসএর পর যখন খেতে বসলাম এক থালা বিরিয়ানি নিয়ে , ওনার চোখ ছানা বড়া ।হয়তো এই মুখ থেকে খিস্তি বেরোল বলে ।সঙ্গে সঙ্গে নিজের জায়গা বদলে অন্য জায়গায় চলে গেলাম ।বিয়ের বছর দেড়েক হয়েছে ।মানে ওই ঘটনা গুলোর বছর দেড়েক হয়েছে ।প্রিয়া নিজে চাকরি করে ,প্রতি সপ্তাহে ও নিজের বাপের বাড়ি যায় ,রবিবার যায় ,আর সোমবার আমি গাড়ি করে নিয়ে আসি ।জামাই এর জন্য বিরিয়ানির ব্যবস্থা থাকে ,আর সত্যি বলতে কি ,প্রিয়া নিজে একা আসতেই পারে ,কিন্তু আমি যাই ওই বিরিয়ানির লোভে ।কিন্তু ঘরে ঢোকার আগে আমাকে ওনার রাগি দৃষ্টি পেরিয়ে তারপর ঢুকতে হয় ।হয়তো মনে মনে আমাকে খুব খিস্তি দেন ।পাত্তা দি না ।দিকবিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে খাই ,বেড়িয়ে একটা রেস্টুরেন্ট থেকে বাড়িতে বাবা মা ভাই এর পছন্দ মতো খাবার (বেশিরভাগ দিন বিরিয়ানি থাকে ) নিয়ে বাড়িতে ফিরি ।এরকম একদিন বিকেলের দিকে ,অফিস থেকে ফিরলাম আমি ,ফিরে দেখি প্রিয়া বাড়িতেই ।জিজ্ঞেস করলাম ,-“আজ অফিস যাসনি ?”
-“গিয়েছিলাম ,শরীর খারাপ লাগছিলো ,চলে এসেছি ।”
আমি চিন্তিত হয়ে পড়লাম ।কি হলো আবার ।আমার চিন্তিত মুখ দেখে প্রিয়া মুচকি হাসলো ,কাছে এসে বললো ,-তুই বাপ হতে চলেছিস।”
এক মুহূর্ত চুপ ।কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি করবো ।অবশেষে যখন বুঝলাম লাফিয়ে উঠলাম ।বাবা ,মা কে জানালাম ।ওরাও খুব আনন্দিত ।ফোন করা হলো আমার শ্বশুর বাড়ীতে ।শাশুড়ী শ্বশুর দুজনই খুব খুশি ।জানালেন ,-“আমরা কাল আসছি ।”
এই শুনে ফোন টা নিজের কানে নিয়ে বললাম , “তা বাবা আসার সময় আর্সেলান থেকে সবার জন্য বিরিয়ানি নিয়ে আসতে পারবেন একটু ?”
ফিসফিস করে যেনো তিনি বললেন ,”হারামজাদা টা নিজে তো খাচ্ছে ,আর নতুন যে আসছে তাকেও এই নেশা ধরাচ্ছে ।পাক্কা হারামি জামাই ।”
সকালে বিরিয়ানি এসেছিলো ঠিকই ।কিন্তু তারপর থেকে উনি কখনো আমাকে ফোন করেননি ।কি বিশ্বাস ,যদি আবার বিরিয়ানি নিয়ে আসতে বলে।যদিও আমার মধ্যে লজ্জা কম ।এখন বাপ ছেলে দুজনই যখন ওখানে যাই ,বিরিয়ানি ছাড়া চলেনা ।

Writter: Suman Choudhury

Advertisement

Leave a Reply