কফিহাউস-2

0
261
Advertisement

-“কতোদিন ধরে স্নান করিসনি ? “

-“কেনো ? “

-“তোর এই দুর্গন্ধে গোটা কলকাতা কাঁপছে । “

-“শুধু আজ । আর তাছাড়া এই ঠান্ডার সময় কেউ স্নান করে নাকি ? “

Advertisement

-“আমি রোজ করি । “

-“তোদের মেয়েদের তো সব কিছুতেই বেশি । “

-“আচ্ছা ? কটা মেয়ের সাথে এভাবে স্নান না করে দেখা করেছিস ? “

-“কই দুর্গন্ধ ? খালি মিথ্যে কথা । ভালোভাবে ডিও মেরে এসেছি । “

-“তোর আজই স্নান বন্ধ করতে হলো ? “

-“এই জন্য আমি প্রথমে দেখা করতে চাইছিলাম না । কিন্তু তোকে বললে তুই রেগে গিয়ে ব্লক মেরে দিবি তাই বলিনি । অনেক কষ্টে কোনো মেয়ে দেখা করবে বললো আর যদি এভাবে সুযোগ নষ্ট করি… তাই চলে এলাম । “

-“এবার তো এমনিই প্রেম করবোনা । “

-“আরে খুব এক্সট্রা করছিস জানিস ? অতটাও কিছু হচ্ছে না কিন্তু । আচ্ছা আমি চললাম । “

-“এখনই ? তুই তো বললি হাতে আজ তোর সময় থাকবে । “

-“হ্যা সে আছে । কিন্তু তোর নাকে নাকি খুব বাজে গন্ধ আসছে । তাই চললাম । পরে একদিন আসবো । স্নান করে । “

-“আরে বোস বোস । ইয়ার্কি করছিলাম । “

-“হুম । এবার ঠিকআছে । যদিও যেতাম না । “

ফেসবুকে কথা হতে হতে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেওয়া তারপর তা গড়িয়েছে আজকের দেখা করায় । সুমন বিটেক শেষ করে এখন একটা কোম্পানির উঁচু পদে চাকরি করে । বাড়ি থেকে ওকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে । বাড়ি থেকে তাকে বলেই দেওয়া হয়েছে “হয় গার্লফ্রেন্ড খোঁজো নয়তো আমাদের পছন্দমতো মেয়ের সাথে দেখা করো একদিন আর বিয়ে করো । “

-“একবার দশ মিনিটের জন্য দেখা করে কিভাবে বুঝে নেবো যে এই মেয়েটার সাথে পুরো জীবন কাটিয়ে দিতে পারবো ? “

-“আহহা । তোমার বাবাকে আমি বিয়ের আগে এক ঝলকও দেখিনি । বুঝেছো ? তোমার দাদু দেখে গেছেন তোমার বাবাকে তোমার ঠাকুমা বাড়িতে , ব্যস , ওনার সাথে আজ ত্রিশ বছর । ওসব ডায়লগবাজি আমাকে দিয়ো না বুঝলে হে গরিবদের রাজকুমার রাও  ? “

তা যাই হোক । কফি হাউসে দুজন যখন দেখা করেছে তখন সময় কাটাতে হবে ।

-“আচ্ছা তোর কি পছন্দ ? চা না কফি ? ” সুমন জিজ্ঞেস করলো ।

-“চা । তোর কিশোর কুমার পছন্দ নাকি নতুন কেউ ? “

-“ওমপ্রকাশ মিস্র । দ্যাখ পুরোনো গান ভালো লাগেনা আর এখন গান বলতে অরিজিত সিং । পোষায় না । তোর ? “

-“কিশোর কুমার অবশ্যই । আচ্ছা শাহরুখ না সলমন ? “

-“নওয়াজউদ্দিন । আচ্ছা ক্রিকেট না ফুটবল ? “

-“ফুটবল । আমি বাঙালি । “

-“আমার ক্রিকেট ভালোলাগে । ফুটবল ভালোলাগেনা । আচ্ছা শাড়ি না হট প্যান্ট ? “

-“অবশ্যই শাড়ি । কোনো তুলনা হয়না । আচ্ছা গণতন্ত্র নাকি একনায়কতন্ত্র ? “

-“একনায়কতন্ত্র । উফ । যেখানে আমি রাজা । কিম জং উন । আমার আইডল । “

-“কি ? ? ? ? “

-“ডোন্ট জাজ । সিগারেট না মদ ? “

-“গাঁজা । বাঙালি মেয়ে নাকি পাঞ্জাবি ? “

কথা এগোতে থাকলো এভাবে । সময় কাটলো ।ধীরে ধীরে সময় এগিয়ে চলেছে ।  কফি হাউস থেকে বেরোবে এবার দুজন । প্রিয়া এসে হাত ধরলো সুমনের । সুমন বললো -“নাকে গন্ধ আসছেনা এখন ? “

-“আসছে । সেই গন্ধে পাগল হচ্ছি । “

-“প্রেমে পড়লি নাকি ? “

-“না । কিন্তু শাশুড়িমা কে বলে দিস , বৌ পেয়ে গেছিস ।  । “

-“তুই তো ভালোবাসিস না তবে বৌ  কে হবে আবার ? “

-“ভালোবাসি না কখন বললাম ? বললাম প্রেমে পরিনি । তোর ভালোবাসায় পড়েছি । “

-“কি পার্থক্য হয় ? “

-“আমাল বাবু টা না খেলে আমিও খাবো না বলেও একেবারে গলা পর্যন্ত মাংস ভাত ঠুসছি , এটা প্রেম । আর তোর যখন জ্বর হবে , মুখে স্বাদ পাবিনা , জিভে যা দিবি তেঁতো লাগবে , কিছু খেতে ভালো লাগবেনা তখন তা দেখে আমিও  রান্নাঘরে লুকিয়ে লুকিয়ে নিম পাতা দিয়ে অল্প ভাত কোনোরকমে গলা দিয়ে নামাবো আর এসে তোর মাথায় জলপট্টি দেবো কিন্তু তোকে কিছু বলবো না , ওটা ভালোবাসা । “

-“বাপরে । বেশ সুন্দর ব্যাখ্যা । তবে … ভালোবাসিস ? মানে ভালোবেসেই ফেললি ? “

-“হ্যা । ফেললাম । কি আর করা যাবে । “

-“মানে ? বলতে কি চাইছিস ? এই বল । “

-“চুপ । বাড়ি গিয়ে স্নান কর । “

Advertisement

Leave a Reply