প্রলাপকাব‍্য ক্রম

0
1061
Advertisement

  প্রলাপকাব্য-১

শেষ রাতের ট্রেনে ফেরা
ফেরার যুবক দরজা দিয়ে
চলমান পৃথিবীর খবর নেয়


যৌবনের অচ্ছেদ্য ধারায়
থামা বারণ,তাই অক্লেশে

হারায় আলুথালু প্রেম

জটিল মনস্তত্ত্বের ভিড়ে
মননের কথ‍্যেরা থেমে

সহজ কথারা নিস্তেজ


জানালা বড়োই ছোট্ট
দরজার আঁচলে আকাশ
সেলাই হয়েছে কম


সত‍্য ও অর্ধসত‍্যের মাঝে
শেষরাতের শীতল মলমে
আধকাঁচা ক্ষতেরা ঘুমায়


শেষ ট্রেনে অবশেষে গন্তব্যে।


ফেরার যুবকের জামায়
এগোয় তরুণ ক্লান্তিতে
চোখে আগামীর ছক

ডুপ্লিকেট চাবিটার ঘূর্ণিতে
চেনা অন্ধকার গলি ধরে নেয়
…।


প্রলাপকাব‍্য-২

 কলকাতা শহরকে একটুও চিনি না
প্রয়োজন বোধ‌ও হয়না
শোনা-বাঙালির জান তিলোত্তমা
লল্…
আই ডোন্ট থিঙ্ক ইটস্ আ পার্ট অফ্ বঙপান্তি
ছোটবেলা থেকে শুনি
এ শহর কালচারাল হাব অফ্ ইন্ডিয়া
কাল কি ছিলাম জানিনা
বাট্
আজ-চাঁড়াল-আ'ম-শিওর
শহরটার আকাশে-বাতাসে নাকি
ভালোবাসা-গান-কবিতা ওড়ে;
সত‍্যবচন:শুধু জায়গা বদলেছে,
প্রেমের গল্প লেখে সোশ্যাল অ‍্যাপস্
আর কন্ডোম,

গানের ডালিতে ভরে
আ-র-ব-সা-গ-রী-য়-দেশ-বাসি-তো,
কবিতা-ব্রেক‌আপ ছাড়া জমেনা।


শোনা গল্পগুলোয় ধূলো জমেছে
ছিদামপাঁচালীও উগ্রবাদের মন্ত্র আওড়ায়
বাংলা ভাষার রুগ্ন আলিঙ্গনে
কলকাতা শেষ নিঃশ্বাস নিচ্ছে
তাকে চিনি না চিনতেও চাই না
হু দ‍্য ফাক্ ইস…
.
.
.
ট্রাফিক সিগন্যালে বেজে ওঠে
তবু মনে রেখো-ও-ও-ও-ও-ও-ও-ও

প্রলাপকাব‍্য-৩

ভাষা বদলায় ভাষার জন‍্য
তাগিদে সচল বদলের চাহিদা
সভ‍্যতার ভিতর লুকনো আছে
আদিম নৃশংসতার সূত্র
ঘৃণা বড়োই মায়াবী সত‍্য
ঘটনার উপর ঘটনার ছায়া
রাস্তা জুড়ে প্রতীকি শহর


খোঁজ নেই হেরে যাওয়া সৈন‍্যের


জঞ্জাল গুলোই আসল সত‍্যি
কথাদের ভিড়ে কথক মৃত
রাজা-প্রজা-শোষক-ভাষা


শব্দেরা জোয়ার ভাটার শরিক


এক-শূণ‍্য-এক-শূণ‍্য-এক-শূণ‍্য
…;…;…
আবর্ত
.
.
.
জেতার আগ্রহ নেই

প্রলাপকাব্য-৪

গল্পের শুরুটা সুপারম্যানকে দিয়ে
চোখে স্বপ্ন,পৃথিবীটা স্বপ্নিল করার
একে একে আসে স্পাইডারম্যান
শক্তিমান আরো কত কে;
স্বপ্নগুলো আরো স্বপ্নিল হয়ে যায়

আমার শহরটা ছোট্ট মোটেও নয়
দিনের শুরু বা শেষ
কোনোটিই নিঃশব্দে কাটে না
ভালো লাগে ট্রেনে-বাসে-মেট্রোয়
মানুষ-ঘাম-সুগন্ধীর উপনিবেশ।

ভালোলাগা আর ভালোবাসার দ্বিধায়
যুবক-যুবতীর বিরহের মোচ্ছবে
ভার্চুয়াল জগতের পোস্টের ভিড়
অবলীলায় হারিয়ে যায়
সুপারম্যান-স্পাইডারম‍্যান-শক্তিমান;

জীবনমুখী ট্রেন্ডি ইন্টেলেক্চুয়ালের (আ)রকবোধে
সমান্তরালে জায়গা দখল করে
মুম্বাই ফেরৎ ফিল্মি গান
দরদিয়া প্রেমের আবেশে ঝিমোয়
সত‍্যি কথার দল আর জীবনের সুর;

রাস্তা চলে রাস্তার মতো
দোল খাওয়া ভিড়ের মধ্যে
স্বপ্নের মানুষগুলো জেগে জেগে ঘুমায়
শুধু ব‍্যাটম‍্যান একা জেগে থাকে:
বাঁচার তাগিদে পথিক পথ ভুল করে।

যৌবনের সাম‍্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা
মাঝবয়সে আদর্শের সুড়সুড়ি দেয়
শক্তির বিনাশ নয় রূপান্তর হয়
আদর্শের বিনাশ নয় রূপান্তর হয়;
সব আদর্শের শেষ ঠিকানা পুঁজিবাদ।

আপোস করার অভ্যাস প্রয়োজনীয়
পোস্ট-আধুনিক সমাজের শেষে
টোপ:যৌবন না-বোঝা কিশোরী দাঁড়িয়ে
নেকড়ের খাবার লাগে
আর প্রভুদের ভোট

আমার শহর মোটেও ছোট্ট নয়
নিষিদ্ধ নগরীর ওপরে পুরু প্রলেপ
অভ‍্যাস আর আপোসে কবিতা বাড়াবাড়ি
তবুও বাধিঁ গান,কাব্য করি
পাগলামোগুলো তাড়িয়ে বেড়ায়:
বৃত্তের ভিতর বৃত্তে নিত‍্য ভিড়

আমি আর ব‍্যাটম‍্যান
সিগারেট টানি কালো আকাশের নিচে।

  প্রলাপকাব্য-০

কপোত-কপোতির মায়াজাল
আর যোগ‍্যতমের উদ্বর্তন
চেনা গল্প,চেনা পরিহাস
সাম‍্যানুপাতের আর্বতন

জেতার চিন্তা ভুলে
হারানোর নেশায় বুঁদ
নিঃশেষের বিরতিতে দেখি
হারানো শব্-দের স্তূপ

তুমি-আমি-আমরার
সমীকরণে ধ্রুবক আমিই
চলরাশির ছাঁটাইয়ে লিখি
হীনমনা পৌরুষপাঁচালী

নিঃস্বের অবভাসে শুনি
শব্দের ক্লান্ত গুঞ্জন
ক্রমশঃ জোরালো সে সুরে
শুনতে পাই শিশুর কন্ঠ

হতভম্ব দু'জন সমুখে দাঁড়িয়ে
বিস্ময়ের আঁচ ভয় দেখায়;
নিঃসীম হাসিতে বিদ্ধ যখন,
মৃত 'আমি' আমায় ভাবায়

প্রলাপকাব‍্য-৫

ফজর

যোহর

আসর

মাগরিব

এশা;
লক্ষীভাঁড়ে পাঁচ টাকা

সূর্যপ্রণাম

ঠাকুর-জল

সন্ধ্যে প্রদীপ;
লক্ষীভাঁড়ে পাঁচ টাকা:
সনাতন পন্থা
পুরুষ
নারী
.
.
.
ফজর
সূর্যপ্রণাম
ঠাকুর-জল
যোহর
আসর
সন্ধ্যে প্রদীপ
মাগরিব
এশা

উদ‍্যম-রাগ-জিঘাংসা-অস্তিত্ব-লড়াই-ক্লান্তি
ধর্ম-ভেদ-উস্কানি-শোষণ-লিঙ্গভেদ

আশা-হতাশা-ভবিষ‍্যৎ
জীবন-স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন-মৃত‍্যু

লক্ষীভাঁড়ে পাঁচ টাকা:
আবর্ত

  প্রলাপকাব‍্য-৬

আকাশে মেঘ জমেছে,মৃদু বাতাস,
নিভু আলো আর মায়াবী আবডাল,
তোমার উত্তেজনা পায়,আমার খিদে;
পারদ চড়ুক বা নামুক,আমি স্থির;
টুনির গুঁড়ো দুধটা প্রয়োজন।
সয়াবিন-আলুর পিরিতি চাখা নিরামিষাশী
তুমি,কতটা মাংসাশী আমি জানি:
আমাকে নিয়ে ছেঁদো সেন্টিমেন্ট আর 
কান্না পোষায়না অল্প পেমেন্টে।
তোমরা খুশি থাকো,আমিও থাকি
অভ‍্যেস আর অভাবে স্বপ্নেরা বদলেছে
কিন্তু হারিয়ে যায়নি,বাঁচবার পথটা আলাদা:
সাজানো মার্কস-রবিন্দনাথ-ছিদামের মগজধোলাই
কোনো খোঁচাই নেই;আছি আমি,
আমার শরীর,আমার টুনি আর দিন-রাত।


ভালো আছি বেশ,
টুনির মিষ্টি হাসিতে হারিয়ে।



  প্রলাপকাব‍্য-৭

প্রেমের পৃথিবীতে সার্সিতে ঝিমোয় বুড়ো কাক,
অমর কাব‍্যের দাবদাহ প্রবল সংযত;
চাওয়া-পাওয়ার নির্ধারিত খেলায় নিরুদ্দেশ
দুটো মনের শত ক্ষতদের কলরব-
জরাজীর্ণ নির্দেশতন্ত্রে প্রেমের সংজ্ঞারা
অপূর্ণতার চাবিকাঠি ছুঁয়ে পোষ‍্য,
তোমাকে বুঝব কেমন করে প্রিয়তমা
ভিড়ের গ্রাসে আজ চিন্তারা মৃত।
তবুও নিত‍্য বাঁচার তাগিদে প্রশ্নেরা
অবিরত আঘাত করে নিস্তব্ধতায়:
প্রলাপকাব‍্যে নৈঃশব্দ্য শেকল ভাঙে,তাই
প্রেমের পৃথিবীতে সার্সিতে ঝিমোয় বুড়ো কাক।

  প্রলাপকাব‍্য-৮

আমরা বেঁচে আছি
মাসকা-ভারী বাজার সাক্ষী
আমরা বেঁচে আছি
যৌনতার আহ্বান সাক্ষী
আমরা বেঁচে আছি
চাওয়া-পাওয়ার হিসাব সাক্ষী
আমরা বেঁচে আছি
মৃত্যুভয়তার আঁচড় সাক্ষী
...

আমরা টিকে আছি
আয়নায় অভিনয় বাঁচায় সাক্ষী

  প্রলাপকাব‍্য-৯

আবেগ লিখি লাগাম টেনে
যৌনতার ভরে আধুনিক নই
স্বপ্নেরা হাসে,হাসি আমিও
আয়না মাঝে ভ‍্যাবাচ‍্যাকা খায়
মননের গ্রাফ নিয়ে 
কেউ-ভাবে না
কেউ-ভাবি না
কেউ-ভাববে না
পুঁজিবাদ ও মনন দুই সতীন
নারীবাদে নারী বাদ

নারীত্বের কাঠামো গঠনে সবাই তৎপর
সাম‍্যবাদের খোলে সাম‍্য হাই তোলে
আত্মকে প্রশ্ন
কেউ-করে না
কেউ-করি না
কেউ-করবে না
আয়না বিচ্ছিরি সুন্দর হাসে
স্বপ্নেরা হাসে,হাসি আমিও
মৌনতার ভরে আধুনিক হয়ে গেছি
আবেগ টানি বেলাগাম অন্ধকারে

প্রলাপকাব‍্য-১০


রূপকথা কোথায়?
ধুলোর অরন্যে ধূসর শরীরটা ছাড়া
বাকি সবই যে কালো
পরী নেই অজানা আনন্দ নেই
হেরে যেতে যেতে হারিয়ে যায়
বিলুপ্তপ্রায় স্বপ্ন


ঈশ্বর নেই অন্তত এই অসময়ে


আলোর শেষ রেখাটুকু ছায়
অন্ধকার-অবয়ব,আমি,আর
ক্ষুধার্ত আমার ছায়া
আলো বন্ধ করে করি আলোর খোঁজ
তবে কি এটাই রূপকথা?


দশ-বাই-দশের কোনায় ক্রুঢ় হাসি হাসে
বিনম্র শয়তান
 

প্রলাপকাব‍্য-১১

মৃত‍্যুর চেয়ে মৃত‍্যুময়তা মায়াবী।
রক্তাক্ত জীবন যখন ফ‍্যাকাশে
তখন চারপাশের অন্ধকারে বাঁচে
জীবনের তাগিদ খোঁজা ছন্দ-শব্দ,
গভীর রাতের সুনসান গলিরা
একা কিংবা একাকীত্বের ছদ্মবেশ।
নৈঃশব্দের শেকল পরাটাও বাঁচা,
তবে রক্তের স্বাদ ভুলে।
আদিম সভ‍্যতা থেকেই মন্ত্রবলে
প্রেম অক্লেশে আশ্বাস দেয়,
অবশ‍্য আশ্বাস দেওয়ার জন্যই;
আশ্বাস ভোরের স্বাদ বোঝায় না
তবুও প্রেম বেঁচে থাকে ফ‍্যাকাশে
জীবনে একফোঁটা রক্ত দিয়ে:

মায়ার প্রলোভন কে না চায়?

মৃত‍্যুর চেয়ে মৃত্যুময়তা মায়াবী
তবুও বড়ো স্বাধীন-অসুন্দর-সত‍্য:
প্রলোভন নেই,যন্ত্রণা নেই,আশ্বাস নেই,
সময়রেখার সমান্তরালে নিঃশব্দে
হেঁটে চলা অমরত্বের বৃত্তে।
শুরু-   -শেষ-   -শুরু-   -শেষ-
   অগতি    অগতি    অগতি

  প্রলাপকাব‍্য-১২

সব শেষের মহোৎসবে
যা কিছু হারাবার তারও
বেশি হারাতে হবে জানি
নির্দেশ প্রতিরোধী প্রশ্নে
লুকিয়ে থাকে অবক্ষয়
বুদ্ধিজীবী একে সংগ্রাম
অস্তিত্ববাদী একে উন্মেষ
আর রাষ্ট্র ষড়যন্ত্র বলে
অবিশ‍্যি সকলেই ভগবান
কিংবা ভুত কিংবা এল ডোরাডো কিংবা ছন্দ
এই প্রলাপেও যার খোঁজ অবিচল
শহীদ আমি  সঈদ আমি  সুহৃদ আমি
রাজপথে চাপা পড়া আমি
গলদতন্ত্রে আপোষী নির্জীব আমি
আমরা সবাই ন‍্যায় চাই


ফিনিক্স পাখি এক সিকি হেসে
সীমান্তরে স্বপ্ন ছড়াতে চলল




প্রলাপকাব‍্য-১৩

আর জল নেই,সবই বালি।
ধোঁয়াটে হৃদয়ে চাবুক চালাও।
রক্তের ভেতর তীব্র (অ)চেতন!
কুয়াশা-ভোর,নিরুদ্দেশ,পিছুটান,
স্পষ্ট কথার মরণ-গোঙানি।
অন্ধকার দৃঢ়তর আলোক-পশলা।
চৌকাঠে হাসে চন্দন,ধূপ।
শীতলতম প্রেমের উষ্ণতা,
অতলান্ত-আদ‍্যপ্রান্ত-অসীম যন্ত্রণা-
স্থির-স্পন্দহীন-কুন্ডলী-ধোঁয়া:
নিষ্ঠুর হাসি সাজায় কক্ষপথ;
আরো আনন্দ,সবই শূন্য!

  প্রলাপকাব্য-১৪

চিবোতে চিবোতে যেটা পড়ে
ওটাই সত্যি।
চেটে খেয়ো কিংবা উগ্রিয়ো:
হজম করতে না পেরে
ছিন্নভিন্ন কোরো রক্তাক্ত কোরো;
পরোয়া নেই পরোয়ানাতেও-
বিস্ফোরণ হবে মহাআবেগের
চোরাগোপ্তা নয় প্রকাশ্য জনপথে।
দিগন্তে উড়ছে ধুলো অসংযত,
চোরাস্রোতের শীতলতা মেপে দেখো:
হে রাষ্ট্র,
       হে একনায়ক,
                   হে প্রবঞ্চক
.
.
.
ঐতিহাসিক ক্ষমা চাওয়ার সময় এসে গেছে।

  প্রলাপকাব্য-১৫

 পন্যের ইতিহাসে পন্য হতে হবে:
জীবনের এইটুকু সত্যেই প্রতীকি সুখ;
লক্ষ যোজন দূরে যে মোক্ষ দাঁড়িয়ে
সেটা কখনো ইউটোপিয়া,কখনো প্রলাপ।
সব প্রেম পরিণতি পায় না,প্রয়োজনও নেই,
নয়তো প্রয়োজনের পর্চায় হতো আপোসী;
সব সত্য সার্বজনীন নয়,দরকারও নেই,
নয়তো সত্যের মুজরোয় হতো আদর্শের ব্যাপারি।
তাই মেকি পৃথিবীকে কুর্ণিশ শতাধিক-
বড়ো হও,মায়াবী হও,ঠুনকো হও,রং চড়াও।
এ প্রলাপ 'পন্য-ইতিহাস' বদলাবে প্রতিনির্দেশতন্ত্রে
শব্দ-রক্ত-প্রতিশব্দের মহাকাব্যিক আস্ফালনে।

প্রলাপকাব্য-১৬

-...-...-...-
তারপর
একটি যুবতী
চারটে যুবক
একটা খাট;
দুশ্চিন্ত্য অন্ধকার
\|/
তার পর
এরা সবাই :
ফরিস্তা কিংবা আবছায়া-
বেহেস্তের প্রচার ছাড়া
নির্বচনীয় সত্যের ফুটনোট
\|/

তার(ও)পর
অষ্টাদশী আঁচড়
সামাজিক নেকড়ে
ফুটফুটে মেয়েটার খুন্-এ
চারটে পৌরুষ খুন
\|/
দন্তের অন্তঃস্থে ওষ্ঠের অন্ত।
বৈপরীত্যের সাম্যাবস্থান।
দৃশ্য-১ পুরুষ বেঁচে।
দৃশ্য-৩ পৌরুষ খতম।
তাপ্পর
\|/
দাসত্ব‌-অনুকরণ‌-অপভ্রংশ‌-অপপ্রয়োগ-
অপরাধ-অহিংসা-অহম্-অশিক্ষা-হীনমন-
বিক্রি-ডিক্রি-বিস্মৃতি-ইতিহাসহীন-পরজীবী-
মানুষ:এরর ইন টাইপ:মাংস-তার‌(ও)পর...
-...-...-...-

প্রলাপকাব্য-১৭

এ শহরটা আজো স্বপ্ন দেখতে শেখায়।
হাড়পাঁজর জুড়ে আগলায় স্বপ্নসন্ধানীদের।
চৌরাস্তার মোড়ে ব্যর্থ প্রেমিক এখনও
সিগারেট মুখে জল-বাষ্পের সমীকরণে বাঁচে।


সদ্যোজাত প্রেমগুলো বোঝেনা বিশ্বায়নের জ্বালা
তাই নিঃসঙ্কোচে হাতে হাত রেখে এগোয়;
প্রত্যেক অলি-গলি আগলায় সে নৈবেদ্য।


এই শহরে প্রতিদিন জন্মায় পঞ্চম,যদিও,

পশ্চিমী কুহেলিকায় পাঁচের নামতাই শেষ ঠাঁই!
একে একে মানুষগুলো বাঁচতে ভুলছে,
হিসেবের লাগামে বিস্মৃতির জয়পদ্যে
নিরাপত্তার খোঁজে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
খাঁচায় হাড় নেই,প্রদেশ আছে;
রক্তের রঙ আজ রামধনুতে দিশেহারা;
মননে কাঁকড়াটা শান্ত ক্রুঢ় হাসি হাসে।
আদর্শের বাণিজ্যে যৌনপুরীই মোক্ষ
শুধু মানুষগুলোই ডলারের আওতায় নেই।


লুটতরাজ চালাও আরও প্রবল গর্জনে
নয়তো এ প্রলাপে তোমার সিংহাসন কাঁপবেঃ
শেষ তোমারও হবে,শেষ আমারও হবে।
সময়-সুড়ঙ্গের দেওয়ালে হুঙ্কারের প্রতিধ্বনি
শুনতে কি পাও,হে সর্বশক্তিমান!


এ শহর আমার।স্বপ্ন আমাদের।অধিকার জন্মগত।
মরণকামড় আমার প্রতিবর্ত ক্রিয়া।

  প্রলাপকাব্য-১৮

১০/এ,দশরথ রোড।
বাঁদিকে একটা সিগারেট দাঁড়িয়ে
ডান ‌দিকে আরেকটা একটু এগিয়ে
এবং সারি সারি গার্ড অব অনারে আমি সীতা।
...
সামনের মোড় দিয়ে বাঁদিকে এগিয়েই লুঙ্গি বসে
আর নিরাপদ দূরত্বে একটা ধুতি!
সাম্যাবস্থান তবে বিক্রিয়ার সম্ভাবনা প্রবল:
রাস্তা নিজের মতো করে এগোয় ।
...
চাবুক-পোস্টার-সার্টিফিকেট-পোতিবাদ-ভাঁওতা
...!...!...
চারপেয়ে বিশ্বাস রাস্তার পাশে বসে
নিঃসঙ্কোচে ভালোবাসা বিলোয়।
...
কোনো ভেদাভেদ নেই আকারে:
বর্ণহীন বিমূর্ত মনুষত্বের জয়ধ্বনি বাজে।
এ দেশ আবার স্বপ্ন দেখায় জগতজুড়ে।
.
.
.
ধ্বনি মিলিয়ে যায়
"..."
"স্যার,ফর্মে আপনি কাস্ট লিখতে ভুলে গেছেন।"

প্রলাপকাব্য-১৯

… … …
আর একটা ছায়া
একটা টেবিল
দুটো চেয়ার
একটা অ্যাস্ট্রে
ধোঁয়া ওঠা নিভন্ত সিগারেট
একটা আরশোলা
ভ্যাজানো জানালা
আর একটা ছায়া
একটা টেবিল
দুটো চেয়ার
একটা অ্যাস্ট্রে
ধোঁয়া ওঠা নিভন্ত সিগারেট
একটা টিকটিকি
ভ্যাজানো জানালা
আর একটা ছায়া
একটা টেবিল
দুটো চেয়ার
একটা অ্যাস্ট্রে
ধোঁয়া ওঠা নিভন্ত সিগারেট
একটা আরশোলা ও একটা টিকটিকি
ভ্যাজানো জানালা
আর একটা ছায়া
একটা টেবিল
দুটো চেয়ার
একটা অ্যাস্ট্রে
ধোঁয়া ওঠা…
টিকটিকি চিৎ
-
         মেঝেতে
-
        মুখে ডানা
-
               
-খন্ড
               
-খন্ড
         
-আরশোলা
-সন্ত্রস্ত-স্বাধীন
দমকাহাওয়ায়জানালাখোলা:ঘরময়ধুলো

আর এখানেই
একটা গল্প
শুরু হলো
………

প্রলাপকাব্য-০০

।অবয়বগুলো ভাষা চিনে গেছে
আর ভাষান্তরে যেটুকু বিপথ
বর্তমান তাকেই আঁকড়ে ‌চলে
আর সভ্যতার প্রতিশব্দ বলে
ব্যবসা চালায় রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয়
এবং এভাবেই এগিয়ে যায়
তিলে তিলে বাঁচা স্থবিরতা
ও অস্থাবর জীর্ণ শৈশবকল
যাকে একসময় "শ্রেষ্ঠ" স্তন্যপায়ী
কল্পনা বলে আখ্যা দিয়েছে
মানুষের কলেবর থেকে স্বপ্ন দেখে
এক সুন্দর ভবিষ্যতের আদর্শ
বাস্তুতন্ত্রে অনুপাত মেপে চলা
ভালো থাকার অভ্যাসে হিংস্রতা
মুছে একমুঠো নিখাদ হাসি
আর...
।      ।      ।
ইসিটি।
১৫০-৪৬০।৩০মিনিট।
গেঁজা ওঠা মানুষটা নিথর।
...
"অবয়ব নং
১৯৪৭ ওয়ার্ডের শান্তি বজায় রাখো ন‌ইলে..."

প্রলাপকাব্য-২১

রাগ হয় দুঃখ হয়
হ‌ওয়াটাই স্বাভাবিক
তবে
কে চায় স্বাভাবিক জীবন?
নশ্বরতার সূত্রে বাঁধা
তবুও
মুহূর্তের অমরত্ব কে না চায়?
একটাই তো মানুষ
ভূমিকার ভূমিহীনতায় শুধু
অদল-বদল খেলা
"..."
একটাই তো শরীর
উপস্থিতি আর অনুপস্থিতির
মাঝে কেবল একরোখা যুযুধান
"..."
একটাই তো মন
গণবন্টনে সংরক্ষিত যা
তার হদিশ একান্ত গোপনীয়:
এক স্বাভাবিক জীবনের
আদুরে অস্বাভাবিকতা
"   "
সব উপনদী প্রধান হয় না।
সব প্রেম পরিণতি পায় না।
"..."
এমনটাই স্বাভাবিক
এটুকু না থাকলে
হিসেবের রোজনামচায় মহাকাব্য হয় না।
অস্বাভাবিকতার মিঠে দম্ভে
প্রেমের আস্ফালন সম্ভব নয়।
"!...:...:...!"
উত্তরের উদ্বেগ মিটারে বাড়ে:
ধোঁয়াটে শহর-প্রেমিক যুগল-অনিশ্চয়তা-
প্রেম-ভূমিকান্তর-যৌবন-রাজনীতি-ডামাডোল-
স্বপ্ন-সত্য-মধ্যবিত্ত-হলুদ ট্যাক্সি
শহরটা সব‌ই জিইয়ে রেখেছে এখনো।


প্রলাপকাব্য-২২


(মহাকাশ যতদিন থাকবে
বঞ্চনার ইতিহাস‌ও ততদিন থাকবে


অত‌এব হিসেব-নিকেশ আর গরমিল
এসব‌ই ভাষান্তরের বৈচিত্র্যময় ঐক্য
আর বিভব-প্রভেদের অমোঘ সত্যতায়
আধপোড়া সিগারেট ও সভ্যতা
বিদায় অভ্যর্থনার আশায় বাঁচে


আলোর গতিবেগে উচ্ছিষ্ট আদর্শ
যেদিন আপেক্ষিকতার নির্দেশতন্ত্র ছেড়ে
সৃষ্টিতত্ত্বের রহস্য পাওয়ার লোভ গিলবে
নৈঋত কোণে এক কবি সেদিন
বন্দুক হাতে নিস্পন্দ-নিস্পলক হাসবে
আর নির্মমভাবে অপরিশোধিত প্রেমের ফায়ারে
ঝাঁঝরা করে দেবে সংকেতী-পাঁজর)


অতঃপর সব শেষ।
সভ্যতা শেষ।
মন্ত্রপূত ‌ইতিহাস শেষ।


ধরে নিলাম এটাই শেষ!


"অত‌এব উপসংহারের পালা।
হিসেব কষতে কষতে দেখা গেল
গরমিলগুলো বর্তমান অথচ
বোঝা দায় একান্ত কাটাছেঁড়া ছাড়া।
এখন প্রশ্ন,
হিসেব মিলেও অমিল
অথচ এই গরমিলেই
কেটে গেছে সহস্র কোটি মুহূর্ত
তবে কি মুহূর্তেরা ছলনা করেছিল?
হতে পারে কিংবা নাও পারে,
অবশ্য সব‌ই নির্ভরশীল হিসাবের উপর।
একান্ত আপেক্ষিক সম্পর্ক বাদে
বাকি সব‌ই যে শর্তাধীন চলধ্রুবক।
অত‌এব
গরমিলগুলোও শর্তাধীন অনুসিদ্ধান্ত
এবং মোহভঙ্গের তীব্র জ্বালা নিয়ে
শূণ্যের যথার্থতা প্রতীকি অমীমাংসা।
অতঃপর অসমাপ্তির পটে
ভূমিকা লেখে বিপ্লব এবং
ক্ষুধার নৃশংসতা মেটায় অতলান্ত প্রেম…"


এখন তন্দ্রা শেষ।
স্বপ্ন শেষ।
প্রলাপ শেষ।

হলুদ বেলুন হাতে সিলুয়েট,
ঘাড়ে শ্বাস নেয় অস্পষ্ট ছায়াবাস্তব

প্রলাপকাব্য-২৩

[দূরত্ব যখন ভালো থাকার প্রতিশ্রুতি
সম্পর্কগুলো তখন সেই আবেশে মৃত।
জীবনের আরোহণ-অবরোহণে ক্লান্ত
শরীরটা মায়াবৃত্ত বরাবর একলা হাঁটে।]
<…>
(সীমারেখা জুড়ে কালচে রক্ত পড়ে:
অভিজ্ঞতার আদুরে আবদ্ধতার অবশেষ;
পোড় খাওয়া বসন্ত আজ আর হাসে না!
হৃদয়ের ঠিক নীচে আটক চোরকাঁটা
চুয়ে প্রেম চুঁইয়ে পড়ে অনবরত:
কেউ হিসেব রাখে না দীর্ঘশ্বাসের)
{…}
অগোছালো ‌‌ঋতুচক্র সময়ের রূপান্তর।
অদম্য খিদের মতোই ভালবাসা জাগে।
অদম্য রাগের ভিতর যুদ্ধপিপাসা জাগে।
"…"
(শিথিল শরীরের প্রাণস্পন্দ তুমি,স্পর্শ-
প্রয়োজনের অনেক উর্ধ্বে একান্ত একাত্মতা;
পরমাণুর তাপপ্রবাহে মৃত্যুর চেয়ে শীতল
একটা স্পর্শ,একটু শান্তি আর একটু স্বপ্ন
এ মৃত্যুকুন্ডে বাঁচার ইচ্ছে ও স্বান্তনা।)

প্রলাপকাব্য-২৪

নাকের জল নোনতা।
একটা 'শৈশব',হাঁটতে হাঁটতে,
হাঁ করে গিলছে কুয়াশা:
অলিগলি মাপে সাপ-
আলো আর অন্ধকার-
চাবুক গড়ে মেরুদন্ড,
সংকেত খুঁজতে গিয়ে
দেখা মেলে বিচ্ছিন্নতাবাদের;
প্রলোভন এড়িয়ে সাপটা এগোয়।
ফোঁস শুধু ফোঁস,কামড় নয়!

সময়ের উপর সময় জমে,
ধুলোর উপর ধুলো:
মনের জল শুকনো।
আবেগ হারিয়ে পুরাণ হয়
বুনিয়াদি ভালবাসা এবং
দীর্ঘশ্বাসের ভনিতায় বাসা
বাঁধে স্বপ্ন ও অস্তিত্ব:
জিভের উপর জিভ মিশে
রিপুর জল মাপে উর্ধ্বশ্বাস
আর ত্বক রাজপোষ্যের মতো
ইশারার নৈঃশব্দ্যে আঁকে
সুখের মরীচিকা ও প্রয়োজনের সিলুয়েট!
কান্না পায়,হাসি পায়,যন্ত্রণা পায়-
আত্মর অনুরণনে হুড়মুড়িয়ে
ভাঙে মেকি মেরুদন্ড

বৃত্তের ভিতর বৃত্তের সমীকরণে
অপকেন্দ্রী 'আমি' উড়তে চায়।
ছিন্নভিন্ন করতে চায় জীর্ণ সভ্যতা।
সাইরেন ছোটে শিরায় শিরায়
আর নিরাপত্তাহীনতার নিরাপত্তায়
সূত্র মানার অভ্যেস আঁকড়ে
বুকে ভর দিয়ে মেরুদন্ড
দেখায় বিষাক্ত সাপ হাসিমুখে।
সভ্যতা ঘামজমা কপালে তৃপ্তির হাসি হাসে,
বিস্ফোরণগুলো চাপা পড়ে
ইতিহাস,ছাই ও অন্ধকারে

চোখের জল‌ও নোনতা।
উপলব্ধির মালা গলায়
ঘুমভাঙা অ্যালার্ম বন্ধ করে
ডাইরিটা জঞ্জালের বালতিতে ছুঁড়ে
'বার্ধক্য' ভোরঘুম দিতে যায়।

প্রলাপকাব্য-২৫

(অনন্ত সমুদ্রের ঢেউয়ে ডুবে
একটা শরীর জল খায়
আর অপেক্ষারত শকুনের চোখের
তীক্ষ্ণতা উপেক্ষা না করে
অদ্ভুত তেজে তাকায়:
ভয় হয়!শিহরণ জাগে!
উপভোগের তাড়ণায়-বাঁচার খিদে
ক্রমশ বাড়তে বাড়তে আবেগ মাখা
ঢেউয়ের বুক চিরে ডলফিনের
সাহসে ভর করে পাড়ি দেয়,
পিছে সরে যায় দিকচক্রবাল
আর আর্তনাদী অনুনাদের
গভীরতা মাপে গলে যাওয়া বেস্ নোট।
এমনটাই তো হ‌ওয়ার কথা ছিল:
পাড়ি দেওয়ার আনন্দ আর শিল্পসত্তা
সমান্তরালে বেড়ে ওঠা প্রেমের নামাবলী,
ঝড়ের আদর আর খিদে পেটে শরীর বেচা-
নিগূঢ় শান্ত সত্য আর শুকনো চোখের
কোণায় গুটিয়ে নেওয়া প্রশ্ন-জবাবদিহি;
প্রয়োজন আর প্রেমের স্বরলিপির
ভিড় ঠেলে যে ছায়া এগোয়
ধূসর নীলচে আকাশের প্রতিবিম্বে,
সে জানে বাঁচার মানে সভ্যতার একনায়কতন্ত্রে!)

[প্রতি রাতে দীর্ঘশ্বাস চেপে,
{শিলিং ফ্যানের সহবাসে নির্দেশিত,
(অবয়বগুলোর শুখা কান্নার শব্দ
প্রতিফলিত হয় ক্ষতদের ক্যানিয়নে)}]
.
.
.
......এমন‌ই অগুনতি অপ্রাপ্তির,
(প্রাপ্তির আশ্বাস ও পূর্ণতা কাঁধে)শরীরটা,
সাঁতরে যায় জীবনের অপর প্রান্তে
অতলান্তের বুক চিরে শেষহাসির~তৃপ্তি পেতে।


প্রলাপকাব্য-২৬

[{
(এখনও ভেঙে পড়তে পারি যেকোনো সময়
মহাকাব্যে লুকোনো যন্ত্রণা নিয়ে
আর পরমুহূর্তেই জোকারের পরিহাস বিলিয়ে
উঠে দাঁড়াতে পারি পৈশাচিক সারল্যের বুকে;
::
ইমোজি-বিভক্ত সমাজের চোখে পোশাকী নাম
যার স্ট্রাগল,বিজ্ঞান তাকেই স্থিতিস্থাপকতা আখ্যা
দিয়ে চোখের ভিতর আলোর খেলা দেখায়।)
+
(গুরুত্বের শর্ত মানতে মানতে যে কবিতা
আবেগ বেচে বাজার দর বাড়ায়
সেও শিল্পের সত্যতা মেনে চলে নিজ মতে-
আসলে সব‌ই সত্য,যাহা বিদ্যমান তাহাই সত্য
কিংবা অশ্রাব্য ইতিহাস কিংবা গুরুত্ব
হারানো তিক্ত প্রতিশ্রুতি যার অস্তিত্ব
সম্পাদকের হাতে আর টাইম কলের প্রতীক্ষায়...)
+
শহরটা আলোর সীমারেখায় বাঁচে
আর শব্দের উপর শব্দ মিশে খেলে
সভ্যতার নিঃসঙ্গতা এবং তার ভিতর
যে যার নিজের মতো করে খুঁজে নেয়
সুখের ঠিকানা ও শীতলতা:
চামড়া ঝুলে যায়,চরিত্ররা হারায়।
চামড়া জুড়ে যায়,চরিত্র আকার পায়।
সন্ধ্যে-পাখির দল কিচিরমিচির শব্দে বাসা চেনে।}
×
π(হতভম্ব প্রেম উপপাদ্যের নির্বচনে থমকে।
হতভাগ্য বিশ্বাস হাসি-তে কাঁদে।
হতবাক পৌরুষ সাহস বেচে বিবাদী।
হত নারীত্ব ধৈর্য জড়িয়ে কবরে ঘুমায়।)^২]


...টিক্-টক্-টিক্-টক্-টিক্-টক্...


পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে।
চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে।
পৃথিবীর আবর্তন পশ্চিম থেকে পুর্বে।
সূয্য পুবে ওঠে পচ্চিমে অস্ত যায়
এবং
বিশ্বাসের জোরে
সুরভিত অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম বোরোলীন!


প্রলাপকাব্য-২৬.১

এবং হঠাৎ করেই বছর কুড়ি পরে
শহরের কোনো স্মৃতিপথে
দেখা হলো তোমার সাথে আকস্মিক,
বুকের ভিতর হাল্কা খুশি আর
একরাশ দ্বিধা দিয়েই আপ্যায়ন,
শুধু চোখে চোখ রেখে কথাটাই উধাও!

পালাতে পালাতে সাগর পেরিয়ে
লুকোচুরি খেলার অভ্যাস জাপটে,
প্রত্যহ আত্মপক্ষ সমর্থনে আদুরে
আত্মহত্যা আর মুখোশের চাকলা,
ফেভিকুইকের ভালবাসায়,মুখের সাথে
সম্পর্কে থাকে শর্তের বিনিময়ে;

প্রতিনিয়ত যে চরিত্রেরা হারিয়ে যায়,
কোথায় যায় তার হিসেব নেই:
যুদ্ধের পূর্বাভাসে যেটুকু চাপান‌উতোর
শান্তির জলরং ছড়ায় তার ভিতর
কতটা গ্লানি লুকিয়ে কে জানে?
উত্তরের দাবিও প্রতিবাদের মতো চাপা।

আর তখন‌ও তুমি আমার কাছে
আবদার করবে অসমাপ্ত হিসেব,সমীকরণ
এবং একমুঠো সত্যি যার প্রত্যুত্তরে
বোটানিক্যাল গার্ডেনের গাছটার মতোই
সত্যিটাকে খোঁজবার অভিনয়ে আবার
পালিয়ে যাব তোমার দৃঢ়তার কাছে হেরে:

এমনটাই তো কথা ছিল-
আমি তো জিততে চাইনি তোমাকে হারিয়ে,
শুধু বড়ো হ‌ওয়ার অভ্যাসে
প্রতিশ্রুতি ভাঙবার ঝোঁক,
আমায় ক্ষমার অযোগ্য চূড়ান্ত
সামাজিক ও সফল পুতুল করে তোলে!
.
.
.
হে প্রেম,হে মাটি,হে সমাজ:
সভ্যতার চূড়ান্ত গতি-গতি খেলায়
গিনিপিগের দল‌ও রান্নার নুন
চোখের জলে অ্যাডজাস্ট করে
আর পুঁজিবাদের উচ্ছিষ্টে দীর্ঘশ্বাস চেপে
হাসি সাজিয়ে আক্ষেপের পেনশনে
উপসংহার লেখে।

প্রলাপকাব্য-২৭

গর্বের পৃথিবীর ঠুনকো দেওয়ালে
ইচ্ছে করে,আঁকি
অস্তিত্বের উপকথন আর
সমান্তরালে স্তাবকতার হাতছানি দেয় কুয়াশা।
"………"
ইচ্ছের ভিতর ইচ্ছের দ্রাব্যতায়
তৎপর একটা যৌবন
কখনও পাখনা মেলে,
কখনও বা পোষ মানে;
আর এই আদুরে বাধ্যবাধকতায়
সভ্যতার ছাঁচিকরণ
'আমি'-গুলোর মরফিনাচ্ছন্নতা!
"?"…"?"…"?"
আলো আর অন্ধকার
অন্ধকার আর আলো

ভেক্টরবিহীন দলাপাকানো রাশি
শহরজুড়ে স্লোগানে মিশে:
আমরা সভ্য-শিকড়বিহীন-ভ্রান্ত
আপেক্ষিকতা ও অসঙ্গত নান্দনিকতা,
আবেগের ব্যবসায় দন্ডায়মান উন্নয়ন-
যার ফেটে পড়ার ইচ্ছে অগাধ।
আর সেই বিস্ফোরণের স্থান নির্বাচনের
ব্যর্থতা ঢাকি একগাদা অপ্রয়োজনে
গজিয়ে ওঠা স্বার্থসিদ্ধিতার লেবেলিকরণকে
'নান্দনিকতা' বলে কারবার করে।
।"…"।"…"।"…"।
স্যাটায়ার ফাঁদি অক্লেশে-
() () ()
কলমজীবিরা প্রশংসা-প্রতিবাদ করে ল্যাজ বাঁচিয়ে।
কলমধারীরা কলম চালায় পেট-মধ্যবিত্ততা বাঁচিয়ে।
"!"…"!"…"!"
পরিশেষে পোশাক ছেড়ে
প্রতিবিম্বের মতো 'সত্য' আসে:
অ-উ-ব কিংবা অপেক্ষমান উপেক্ষিত বস্তু
অথবা তিনোত্তর যুগ পেরিয়ে
মহীনের ঘোড়াগুলির গুরুত্ববোধ,হয়তো বা
সিগারেটের ধোঁয়া ও পিচগলা রাস্তার সহবাস।

প্রলাপকাব্য-২৮

"বেঁচে আছো কবি?"
প্রতি মুহূর্তে প্রশ্নের ভগ্নাংশে
হারিয়ে যাওয়ার হাতছানি
খন্ডচিত্র আধো ব্যক্ত
সময়ের তারে বাসি কাপড়
বিন্দুর উপর বিন্দু
জমে
(.
.
.)
শহরের মাঝে সবেগে ছোটা
মেট্রো,অচলায়তনের অবাধ্য সন্তান
ভিড় ঠেলে এগোয় ক্লান্ত শরীর
"কোথায় যায় তারা?"
ঝরাসময়ের বিদ্রোহে মিছিলে হারায়
শেষ বিকেলের গোধূলি-ছায়ারা;
.().().
অদ্ভুত রহস্যময় গাঙ্গেয় স্রোতে
সময় আর আমি
পা ঝুলিয়ে হিসেব মেলাই
উড়ন্ত আবেগের ভাঁড়ে,
কখনো নুন মেশাই
কখনও বা চিনির বাহুল্যের
বিরক্তি ছুঁড়ি শূণ্যে!


"শেষ হবার যা,সব‌ই কি সহজিয়া?"
কত তথ্য,কত সত্য,কত মত
সবাই ঠিক কিংবা আয়নার সামনে
নিজেকে দাঁড় করাবার যুক্তিতে অটল।


"এত প্রশ্ন কেন?
কবি তুমি ক্লান্ত?"


পায়ের কিটোর ছেঁড়াটা বাড়ছে
যেমনটা বাড়ছে ফেসবুকী প্রতিবিম্ব।
"কোথায় আমি?কোথাও কি নেই?"
সবটাই আমি অথচ ‌নিজেকে
চিনি না।


আকাশে তারা ফুটেছে, মেঘ অভিভাবক;
খবরের চ্যানেল বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল!


"বেঁচে আছো কবি?"
মৃত সভ্যতার যোনিতে রক্ত লেগে-
ধর্মের কোলাজে পৈশাচিক আবেশ,
সুখের বিভিন্নতায় শরীরীরা সুখী;
তোমার কবিতা ব্যাকরণ মানে না।


তন্দ্রা ভেঙে জেগে থাকে শরীর,
ইন্দ্রিয়ের তাড়ণায় মশকীর পরকিয়া,
চূড়ান্ত শব্দের অকালদমন:
মধ্যরাতের নিস্তব্ধতায় বাঁচে অনুরণন
আবেগী সুরের যন্ত্রণার;
ঝুলন্ত অবয়বের গা ঘেঁষে
থার্মোমিটার জানায় তাপমাত্রা ৯০ ডিগ্রি
এবং নিম্নাভিমুখী
(...)
"এখনও বেঁচে আছো কবি?"
কল্পনা আর বাস্তবের
রং-মিলান্তী জুড়ে প্রতীকি অবয়ব
ছায়ারা মিশে গেছে অসময়ে;
.
.
.
হিসেবের খাতা বেপাত্তা।
ট্রাফিক আর শব্দগন্ডে
প্রথম চুমুর আবেশ আগলায়
দিশেহারা প্রেম আর
টার্মিনালি ট্রাজিক চরিত্র
মোহভঙ্গের সুখ আগলে
এগোয় দিনান্তের সাকিনে;


ঝাপসা কাঁচের আদরে
মৃত কবি বাঁচার ছড়া লেখে।


প্রলাপকাব্য-২৮.৩

"তাহলে সব‌ই মিথ্যে?
এতগুলো প্রতিশ্রুতি,এত আশ্বাস
বিদ্রোহের পান্ডুলিপি,সব‌ই ভাঁওতা?
হে কবি,কলম কি তবে বেশ্যা?"
চারপাশে প্রতিনিয়ত লাশেরা ঘোরে
আর ঘামের গন্ধ হারিয়েছে পশ্চিমি ধূপে।
কাব্য একপ্রকার বুজরুকি!
শেষ নেই,শুরু নেই,অস্তিত্ব আছে শুধু!
কবি নেই,পাঠক নেই,বক্তব্য নেই-
আছে ভুলে থাকার খেলায়
স্মৃতিমেদুরতা ও আবেগচারণ।
এতটা শান্তিপূর্ণ সহবাসে
কথারা ক্লান্ত শরীরে গুলি চালায়
এবং ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোয়,
যাকে 'অন এয়ার ফ্রি' ভরসাযোগ্য এডিটিং,
বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের নিউক্লীয় গদিপ্রেমে
ইতিহাসবর্জিত 'কিষাণ'-সস আখ্যা দেয়।

"এত তীব্র কেন তুমি,কবি?"
পরিচিতির ব্যবসায় একঘেয়ে রুটিন:
পোষ্য এক দল পোষ্যতর থেকে পোষ্যতম
হবার বিনিময়ে ভিড় উপার্জনের চেষ্টায়
আর সেই ভিড়ের ভিতর কিছু
অনুসন্ধিৎসু আশাহত উত্তরকামী চোখ
সুধোয়-
দর কত?
বল ভেঙে কালি ছড়িয়ে যায় ভাবনার আয়নায়…
!!!
"তারপর?"
তারপর সহ্যের সীমা অভিজ্ঞতার সাম্যানুপাতে
চুপ হ‌ওয়ার অভিনয় আঁকড়ে উলগুলান আঁকে
আর স্বৈরাচারের ভিতর স্বপ্ন দেখে বাঁচার

এ মৃত্যু নির্বাচনে
কোনো রং নেই,
কেউ আপন নয়,
অবসাদের নির্দেশিকা আসলে
মসনদের প্রারম্ভিক পাটিগণিত;
আর বিদ্রোহের মেহফিলে
রূপকের পাঠ্যক্রমিক ছাঁটাই
'ছড়ার' গুরুত্ব বাড়ায় তেলের দরে।

"কবিত্ব হারাতে চাও,কবি?"
একটা লড়াই প্রতিদিনই চলে
সময়,শরীর নির্বিশেষে অবিরত;
চরিত্র বদলায় লড়াই নয়।
আর দিনান্তে গ্লানির স্খলন
ঠাসা প্রশ্ন যতদিন বিঁধবে,
এ অকবির কবিত্ব ততদিন
নিশ্চিত ভাতঘুম দেবে।
.
.
.
জ্বলন্ত সিগারেটের শেষ দীপ্তি
আর গুমোট গাঢ় ধোঁয়া,
তীব্র আবেগী চুমুতে মৃত্যু-শীতল
দৃষ্টি উপেক্ষা করে পেঁচার,
কলমের পুনর্জন্মের ছায়াপথ আঁকে।

প্রলাপকাব্য-২৮.৫

উড়ন্ত চাকতির নীচে মানুষের ইতিহাস লেগে আছে।
কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত শিশুর জিভ
মুহূর্তের স্বপ্নে নুনের অভাব মেটায়;
তীব্র একটা শান্তি যেন জড়িয়ে ধরে
মেরুদন্ডের চারপাশে পরগাছার মতো।
এ কোন রাত,সকালের চেয়েও চোখধাঁধানো স্বচ্ছ!
ভয়ঙ্কর একটা যন্ত্রণা তীক্ষ্ণ স্বরে
গোঙাতে চায় বিশ্বাসহীনতার শীতল স্পর্শে।
পালানোর হাতছানি প্রতিমুহূর্তে জানায়
সময় কী আর আছে কবি?


"এত ভণিতায় ভালো আছো?"
অন্ধকার সময়ের আয়তঘনে
তিলে তিলে মৃত্যুর সহবাস মাপে অনুরণন:
এ আমি কোন্ আমি?
অসময় আর আলোহীনতা আবেগের
তীব্র খেলায় ইন্দ্রিয়ের ভিতর বিদ্যুৎ খেলায়।
অতঃপর, মুহূর্তের গতিহীনতায়
সান্দ্রতা মেখে চিন্তারা একদৃষ্টে জানালায় চেয়ে-


"ওরা কোথায় যায়?"
অন্ধকারের প্রান্ত ধরে হাঁটে
বিবর্ণ প্রতিকৃতি, যেন সভ্যতারই উচ্ছিষ্ট
এক দীর্ঘ চলচ্চিত্র; শুরু নেই, শেষ নেই
সারিসারি শব নিঃশব্দে ধ্বংসের মন্ত্র আওড়াতে
আওড়াতে আগুন খোঁজে এ আলোকবর্ষীয়
নির্জনতার চিতায়,উল্লাস করবে বলে।


"আর কবি তুমি কেন চুপ?"
কথাদের ফল্গুধারা শুকিয়ে ধূধূ বালিয়াড়ি
পরম স্নেহের কাফনে বিপ্লবের
নিস্তেজ অবয়ব আর কবির দেওয়ালে
জীর্ণ পোস্টার,জীর্ণ বিশ্বাস ঠাঁই নেয়।
শুধু শেষরাতের বিনিদ্র কাব্যবোধ
নীলকন্ঠ সেজে হাসি সাজায় আর
তীব্র রোষে নিস্পলক তাকিয়ে থাকে।


চূড়ান্ত দৌড়ে কেউ ধরা দেয় না
আবেগের ব্যবসায় জল এড়ায় বেশ্যা 'আমি'
চাপচাপ কান্নার মতোই জমাট রক্তে
ভিজে যায় অন্তঃসারশূন্য উন্নয়ন

পড়ন্ত সূর্যের অস্তাচলে ছোট্ট শিশু
বালির প্রাসাদ গড়ে স্রোতের অপেক্ষায়


দিগভ্রান্ত কবি কুয়াশায় হারায়
বাঁচার প্রহসন থেকে অনেক দূরে

প্রলাপকাব্য-২৯

শহুরে জনপথ সুনসান প্রতিধ্বনি,
শহরতলীর রাতের পসার‌ও ঝাঁপ টেনেছে,
দুটো ছায়া সন্তর্পনে হাঁটছে।
গতিপথে অদল বদল নেই।
দুটো অপরিচিত মাপছে দিগন্ত,
দশ মিনিটের ব্যবধানে
পরিচিতিগুলোর অকালে প্রস্থান!


বড়ো চমকপ্রদ সত্য!


মোড়ের পর মোড় আসে:
চারপেয়ে ডন-বৈঠক পাশ কাটিয়ে
দুর্ঘটনার মতো ছায়া ডিঙোলো তারা;
ভোটের দরে উত্তাপ মেপে
এপ্রিলের অকালবসন্তে ঘাম শুষে
হাত ও হাতার চিটে দাম্পত্যে
বিষমমেরুর অকস্মাৎ সন্ধি
স্নিগ্ধতার মতোই অক্সিজেন যোগায়
রুটিনমাফিক মধ্যবিত্ত কলিজায়।
আর তার‌ই ফাঁকে দুটো পরিচিত শরীর
মিষ্টি লম্বনত্রুটি আঁকে আবেগের বিস্ফোরণে!
(।।।)
সময় থেমে গেছে।
এক অদ্ভুত শীতলতা
ছেয়েছে এপ্রিলোত্তরে!
দু'জনের দীর্ঘ পথ চলা বাকি…


ছেলেটার মুখ চাপা,
দমকা হাওয়ায় কাপড় উড়তেই
যোনি দেখে মহিলা অফিসার
শিউরে ওঠেন আকস্মিকতায়;
ডাক্তার কলম নিয়ে তৈরি
স্বাক্ষরতার প্রমাণ দিতে!

জীবনের কসম ওরা খেয়েছিল;
মরণোত্তর কসম নেকড়েদের ভেট।
নকুল দানা রং পাল্টেছে।

প্রলাপকাব্য-৩০

 একটা দেওয়াল ক্রমশ বড়ো হচ্ছে,
ধীরে।ধীরে।শৈশবে আটক
চোখ এড়ানোর তাগিদে।


আর নিত্যদিনের অকথাগুলোর ভিতর
একটু একটু করে চাপা পড়ে
কথাদের জন্মকথা আর সৃষ্টি।
তোমার শহরে সকলেই গল্পকার
অথচ নির্ভরশীলতার অতি-কেন্দ্রাতিগ বলে
পরগাছা হবার সাধ আঁকড়ে
দিব্যি দিন গুজরায়।


অদ্ভুত ভাবেই শ্রোতারা গেছে হারিয়ে;
গল্পের সূত্র হাতে ধরে কথক
বিনিদ্র রাতের গঙ্গাবক্ষে
শব্দের আর্তনাদ ভাসায়।


চারিপাশে একটা নিরাশা
চোরাবালির মতো গ্রাস করছে
মহাদাঙ্গার পটভূমি সাজানোর তাগিদে

এবং তোমার আমার মাঝে
সহস্র রক্তাক্ত লাশ পেরিয়ে,
দিশেহারা চোখ,দিনের শেষে
আমার বুকে তোমার স্বস্তির নিঃশ্বাসে
আশ্বস্ত হয়ে নতুন দিনের ভোরে,
আরো একবার লড়ার প্রস্তুতি নেয়।


ধর্মের হুজ্জুতিতে গণতন্ত্রের স্লোগান,
আসলে ছলনার মিষ্টতায় গণহত্যার ষড়যন্ত্র।


স্বপ্নসন্ধানীদের মাঝে দুঃস্বপ্নের নৈবেদ্য
সাজিয়ে,শোষক,পৈশাচিক হাসে
আর পরমুহূর্তেই অস্বস্তি মুখে নিষ্প্রাণে চায়

যেখানে চূড়ান্ত হাসিতে মেরুদন্ডের তীব্রতায়
আমি নির্ভয়ে সম্মুখীন হ‌ই সে হাসির।
চূড়ান্ত অসময়ে প্রলয়ের সামনে দাঁড়িয়ে
তোমার চোখে চোখ রেখে বলি:
প্রেমের এলোপাথাড়ি বুলেট বুকে
তোমার গানেই সূর্য উঠুক।
তোমাদের ভালোবাসায় গর্জে উঠুক
সদ্যোজাত সমান্তরাল ‌ইতিহাস।
.
.
.
দেওয়ালটা আজ শৈশব ছেড়ে বড়ো হয়েছে
কথা-অকথার মাঝে বিশ্বাসের ভরে।
এ প্রলাপ প্রবঞ্চনা নয় প্রত্যয়ের অঙ্গীকার,
অগুনতি আমির কলতান।
সময়ের ধুলোয় আমিগুলো শেষ হলেও
অণুরণন থেকে যাবে

হে একনায়ক,প্রস্তুত হ‌ও।
ঐতিহাসিক পতন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

প্রলাপকাব্য-৩১

প্রতিনিয়ত সমঝোতার মধ্যে বেঁধে
সময়ের দাবানলের সম্মুখে আমরা
আলোর পথে আরো আলো হাতে
বাঁধছি অশ্রাব্য কান্না আর কাব্য:
প্রত্যহের আয়নায় শরীরের প্রতিবিম্ব
/
সত্যমিথ্যা/সত্যমিথ্যা/সত্যমিথ্যা/
/.../.../
আরেকটা বেড়াল একদৃষ্টে চেয়ে
শিকারের অঙ্গীকার স্বীকার করে,
বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন আর ভয়ে
ভালোবাসার নামে একগাদা গান-
ধোঁয়াটে ভোররাতে অযাচিত সুর:
তারপর এক বিকেল অন্ধ করা
দুজোড়া চোখ পরস্পরের উপেক্ষায়
অক্লেশে লুকোয় চাপা যন্ত্রণা
...
ব্যর্থতার রোমান্টিসিজমের ফ্রেমের
মরিয়া খোঁজে পরিচালক চাতক!
...
তোমার জন্য সাধ হয় বানাই
দু'দন্ড নিবিড় প্রেমাভ শান্তির সোমরস
সন্ধানী কুয়ো;বুঝিনি শয়তান
ফ্যালফ্যালিয়ে ক্রূঢ় বিজয়ী হাসি হাসে!
!
মিথ্যাসত্য!প্রতিবিম্ব!মিথ্যাসত্য!
আদিম প্ররোচনায় রিপুর ফাঁদ
!...!...!
আর এভাবেই ক্রোধের মহাকাব্যে
সম্পর্কের আণবিক ঘনিষ্ঠতায়
জন্মায় আলোকবর্ষের প্যারাডক্স
".........."
সত্যের ভিতর মিথ্যে
মিথ্যের ভিতর সত্য
।সত্য।আয়না।মিথ্যে।
"। । ।"
(বিষের শেষ কাউন্টারে
ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে পিশাচ)
চোরাবালি-ব্যর্থতার অনুরণন-অনন্ত লড়াই
.
.
.
পাক ধরা চুল এখনো লড়াই থামায়নি।
থামাবেও না।
ফিরতে যে হবেই তোমার কাছে...

প্রলাপকাব্য-৩২

এ শহর ভেঙে যাচ্ছে
ধ্বনির উপর ধ্বনির ভিড়ে,
রঙের ভিতর রঙের চাপে;
কোথাও কেউ নেই।
জনস্রোতে একটাও জন নেই।
অভ্যাসের বদ‌অভ্যাসে কিছু শরীর
কেবল দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছুটছে
আর দূরে কোনো রেকর্ড
শোনাচ্ছে বব ডিলানের আকুতি:
ওহে মিঃ বৈরাগী,রাগে ভোলাও অ-সভ্যতা।
...
গলির মুখে দাঁড়িয়ে দুটি অবয়ব।
অপরিচিত হবার অভিনয়ে
ছুঁয়ে যায় দুজনের শরীর!
প্রত্যহের ভিড়ে হারিয়ে যায়
চেনা বাঁধনের অকস্মাৎ পতন:
প্রতিবিম্বহীন অতীতের অভাবে
নতুন আবেশে হাঁটে পরিচিত
শরীরের সূত্রহীন সামাজিক কঙ্কাল।
...
একটা কবি,একটা পাগল,একটা প্রেমিক-
প্রত্যেকেই চাইছে নতুন ছন্দে,
পৃথিবীর একঘেয়েমি ঘুচিয়ে দিতে
একটা নতুন গানের স্পন্দে।
হে পরম আত্মীয়,আমি অপেক্ষায়,
তোমার হাত ধরে শিশুর কল্পনায়
হারিয়ে আরো একবার বাঁচব
শীতার্ত রাতে,দু'বাহুর উষ্ণতায়।
.
.
.
ছোট্ট বাচ্চারা ইস্কুলের ব্যাগ কাঁধে
হেঁটে যায় খবর‌ওয়ালার সাইকেল ঘেঁষে;
সুর্য উঠে গেছে,ভোর হয়েছে,
আকাশবাণীর ইষ্টমন্ত্রে স্বপ্নেরা
পরম আদরে বাস্তবকে ঘুমের
সোহাগে জড়িয়ে রাখে।

প্রলাপকাব্য-৩২.৭

তাহলে কথারা কার্যত অভ্যাসের দোসর।
পরিচয় নেই,ইতিহাস নেই,পটভূমি গুম
অথচ গল্পের স্রোতে চরিত্রেরা
এগোয় প্রতিবর্ত ক্রিয়ার সূত্রে
.
.
.
সুর নেই গানে,এঁদো গলির মুখে
পলাতকের মতো বিমূঢ় ছায়া:
পৃথিবীর বুকে ভিড় করে দাঁড়ানো
দলীয় আপোষের সম্মুখে,একটা
বিপ্লব,মাইক্রোফোন‌ই শেষ সম্বল!


মফঃস্বলের অভিজ্ঞতাহীন স্বপ্নের দল,
আওয়ামের শব্দে পতাকা ধরে এগোয়;
জল নেই ধরার বুকে,অসহায় আর্তনাদে
অফুরন্ত নুন ছড়িয়ে জীবনের পথে।


বাঁচার সাধে,হেরে যাবে জেনেও লড়ে
একটা ভিড়,ভয়ানক ভিড়,উৎসবিস্মৃত ভিড়

সম্পর্কের ধারণা সেখানে সিলেবাস বহির্ভূত-
তুমি-আমি সেই ভিড়ে হারাই।
আমরা-ওরা সেখানে অচল।
একটা চূড়ান্ত চলমান বৃত্ত,বৃত্তির আশে
ঘুরছে,থামছে না ,এগোচ্ছে না।
কোনো সূত্র নেই,আছে শুধু ছায়াস্তিত্ব…


ভয় হয় তোমাকে হারানোর,প্রেমের দিব্যির
কাঁচা গন্ধ এখনো লেগে ক্ষত-বিক্ষত শরীরে‌।
ভয় হয় দায় এড়ানোর,দলীয় মন্ত্রণার
নিউক্লিয় বিভাজনের দাপুটে নৃশংসতার
সম্মুখে,অস্তিত্বতায় যে দাঁড়াতে হবেই।
ভয় হয় বৃত্তের ঘূর্ণিতে মানুষ না হারায় আর।


অধিকার ব্যতিরেকে কর্তব্যেরা,
মনের শিয়রে,আশাহত চোখে তাকায়;
ভূমিষ্ঠকালে অলিখিত প্রতিজ্ঞার ধ্বনি
মহাসময়ের দেওয়ালে লেপ্টে থাকে!


হে মহাচূড়ান্ত সত্য,শক্তি দাও আরো!
উঠে যে দাঁড়াতেই হবে নিত্যতার আহ্বানে।

প্রলাপকাব্য-৩২.৯

আকাশ কাটে সান্ধ্যতারা চাঁদ উধাও
সাইরেন এড়িয়ে নিঃসঙ্গ হেডফোন
একা জলের ধারে স্থবিরতা শোনে
সোডিয়াম ভেপার মাপে রাস্তার যন্ত্রণা
শব্দহীন জগতে ছোটে অটোমোবিল
নিস্তব্ধতায় আপোষ খোঁজে চূড়ান্ত অস্থিরতা


"ভালো আছি, তোমার খবর?
যেমনটা চেয়েছিলে, তেমনটা পেলে?
যেও না, দু'মিনিট বসো পাশে অসম্পূর্ণতায়,
যাওয়া চলবে না। না আর নয়!"


আমার একক সাম্রাজ্য আজ ভাঙনের
পথে বিলিয়েছে সমর্পণের আলম্ব
রঙের শবঘরে খুঁজি আপন এপিটাফ
বৃষ্টির মালিন্য ধুয়ে পড়ে আছে ধূষর
নির্বিকার চাপ চাপ কান্না শিকড় হারিয়ে
প্রাণহীন বট পড়ে অনুভূমিক মৃত্যুহীনতায়


"ভালো আছি, তোমার খবর?
যেমনটা চেয়েছিলে, তেমনটা পেলে?
যেও না, দু'মিনিট বসো পাশে অসম্পূর্ণতায়,
যাওয়া চলবে না। না আর নয়!"


পালাতে চাইছি এ উপত্যকা ছাড়িয়ে
বিবর্ণ জীবনবোধে গুমড়ে মরে ক্লেদাক্ত লাশ
শিয়রে দাঁড়িয়ে হাসে রবীন্দ্রনাথ ঠায়
ঘৃণার উপকথোনে মানুষ নেই কথা নেই
বক্তব্য নেই আছে শুধু হাহাকার
অনন্ত আবেগের হাহাকারে শব্দেরা লুপ্ত


"ভালো আছি, তোমার খবর?
যেমনটা চেয়েছিলে, তেমনটা পেলে?
যেও না, দু'মিনিট বসো পাশে অসম্পূর্ণতায়,
যাওয়া চলবে না। না আর নয়!"


মেঘ নেই বর্ষা নেই জন্ম নেই সুপারনোভা নেই
প্রযুক্ত বলের অভাবে চূড়ান্ত জাড্যদ্বয়
বাস্তব হটিয়ে বিশেষণহীন কল্পকথার
অকালবোধনে লেখে নজরুলের নৈঃশব্দ্য
পটভূমি হারানো অনাবেগী চরিত্রের মতো
হেঁটে চলি ধুঁকতে থাকা বৃদ্ধির আবেশে


"ভালো আছি, তোমার খবর?
যেমনটা চেয়েছিলে, তেমনটা পেলে?
যেও না, দু'মিনিট বসো পাশে অসম্পূর্ণতায়,
যাওয়া চলবে না। না আর নয়!"


সময় তার নিঃশর্ত চলমানতায় লেখে
শর্তাধীন ষড়েন্দ্রীয় কারসাজি অক্লেশে
অলক্ষ্যের আর্তনাদে প্রলাপ ক্লান্ত বিনিদ্র
কবির রক্তাক্ত শরীরে বুলেটের ভালোবাসা
"হে মহাসময়, ঋণের ভারে আর কত ডোবাবে,

আমায়?" সব‌ই তো জাগতিক স্বপ্নভঙ্গের চালচিত্রে

"ভালো আছি, তোমার খবর?
যেমনটা চেয়েছিলে, তেমনটা পেলে?
যেও না, দু'মিনিট বসো পাশে অসম্পূর্ণতায়,
যাওয়া চলবে না। না আর নয়!"


আমাদের ছোটো নদী চলে আঁকেবাঁকে
সব ছোটো নদীর শেষ ঠাঁই বড়ো নদী
সাগর ডাকে স্রোতের মায়ায়  অনাদি শীতলতা

প্রলাপকাব্য-৩৩

(রাস্তা কোথায় যায়?)
স্তব্ধতার গান আর আদিম সুরে
নৈঃশব্দ্যের আভরণে মোড় আসে;
অনাবিল সাবলীলতায় দৃশ্য বদলায়:
+…+
আকাঙ্খা নেই‌। উচ্চাশা নেই। আছে কেবল সূত্রের আড়ালে স্বতঃসিদ্ধতার দম্ভ।
ঘন ঘন শ্বাস, কাঁধ চেপে পরাজয়ের
ফরমান ধরায় হাতে আর বশ্যতার
স্বীকারোক্তির অপেক্ষায় উৎসবের
তোড়জোড় করে;
/…/
উৎসব আছে উপলক্ষ্য ছাড়া,
জীবনের ছোঁয়া খোঁজে কবি-
কবিতার রোশনাই ভেঙে গেছে।
নিয়মের বেড়ি ভাঙার সময় শিয়রে।
মধ্যরাতের সিলিং, প্রলাপ আঁকড়ে
প্রাণপণে চেষ্টা চালায় রুখে দাঁড়ানোর!
!…!
(স্বাধীনতা কোথায়?)
পড়ে থাকা হাড়পাঁজরে মেরুকরণের খোঁচা:
এ সময় পরাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতার
মধ্যে নির্বাচনের দামামা বাজায়।
{…}
"বেছে নাও নয় হারিয়ে যাও!"
<…>
হৃদির গহীনে যে সুর বাজে,
আগুনের খোঁজে আজ
তার অগুনতিতম বাৎসরিক কাজ:
(কেউ নেই বোধহয়,মৃত্যুময়তার
হাহাকারে দু'কলি বাঁচার গান গাওয়ার?)
[…]
যন্ত্রণার বেষ্টনে, তৃপ্তি আর অপূর্ণতা বুকে,
প্রলাপকবি হেঁটে যায়

অনন্তের পথে কুয়াশায়…

Advertisement

Leave a Reply