Home literature Bengali Poems একটু রামধনু আঁকিবুকি !!!

একটু রামধনু আঁকিবুকি !!!

0

মনে পড়ে,
এমনি কোন এক শুক্রবারে-
ওর সাথে প্রথম দেখা।
আগে ওকে দেখেছি বারবার;
নির্জনে নীলের নীরাজনে-
কখনো বা, প্রশান্ত মহাসাগরের মত নীল;
কখনো বা কিছু মানুষবেশীর কাছ থেকে-
“তুই এত মেয়েলি কেন” শোনার ভয়ে;
ঘরের কোণে সিঁটিয়ে একলা কাঁদে যে ছেলে-
তার চোখের তারার মত নীল !!

সেদিন ও ছিল নীল ফুল শ্লিভ টিশার্ট;
টানা চোখ ঢেকেছিল কালো রোদচশমায়-

“মনে হল, কালো রঙে একটা গভীর দূরত্ব
ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চারদিকে,
যে দূরত্ব সর্ষেক্ষেতের শেষ সীমানায়-
শালবনের নীলাঞ্জনে!”
অথবা, সেই সদ্য ওঠা রামধনুর মত;
যা কোনো এক কান্নাভেজা নির্জনদুপুরের পর —
একচিলতে বাঁকা হাসির মত;
প্রতীত হয় আকাশের এককোণে!

সেদিন মাঝ নভেম্বরের চড়া রোদে,
ওর ঝলসে যাওয়া বাদামি গন্ডদেশে-
চিকচিক করছিল হালকা চাপদাড়ি।

সেদিন ওর মুঠোর ভিতর রেখেছিলাম হাত!!
ওর বুকের ঘাসে ডগায় ডগায়—
শারদ শিশিরের মত ঝরেছিল আমার অশ্রুকণা !!
ধরা গলাটা খাঁকরে নিয়ে গেয়ে উঠেছিলাম:
“ওহে হারাই হারাই; সদা হয় ভয়,
হারাইয়া ফেলি চকিতে;
আশ মিটিতে হারাইয়া;
জীবন না জুড়াতে হারাইয়া…..”

বর্ষার পরে আকাশে রামধনু ওঠে !!
সেদিন আমিও ওর চোখে দেখেছিলাম:
‘রামধনু ভালবাসা’–

তারপর, সন্ধে নামলো ঝুপ করে।
” দূরে যাবে তুমি,
দেখা হবে না আর কোনদিনই।
তাই,যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে,
শুনব তোমার মুখে।
সত্য করে বলবে তো? “
ও বলল, ‘বলবো’ ।
তারপর, আকাশের মত
ভাসা ভাসা ওর চোখে চোখ রেখে শুধালাম,
‘আমার পাশে থাকবে তো চিরকাল?
কখনো ছেড়ে যাবে না তো?’

একটুকু চুপ থেকে ও বলল,
” “রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে।”
কিন্তু, আমি এর ভবিষ্যৎ জানি না” !!

তারপর, সাতটা আটের ডানকুনি লোকাল!
খিদেয় মাথা ধরেছে তখন ওর।
সারা দুপুরটায় খাওয়া হয়নি।
ট্রেনের কামরায় রাখলো পা।
আমার বুক তখন খাঁ খাঁ করছে থরের মত।

মনে পড়লো,ব্যাগের পকেটে —
তখনো দুটো দশটাকার নোট পড়ে আছে।
দূরে ঝালমুড়ির দোকানের গেলাম দ্রুতপায়ে;
যদি তাতে ওর একটু খিদে মেটে।
কিন্তু বাধ সাধলো হুইশেল্।
কেনা হল না কিছু।
আমার হৃৎপিন্ডের রেললাইনের উপর দিয়ে চলল ট্রেন।

যদি একবার শেষবারের মত তাকায়!!
এই আশায় ঝাপসা চোখে আমি চেয়ে রইলাম-
একা……।
কই তাকালো না তো !!
তখন, আকাশের দিকে চাইলাম।
দেখলাম, আকাশ কোথায়?
আকাশ আমার হারিয়ে গেছে-
স্টেশনের ছাদের কংক্রিটে!

হঠাৎ সেলফোনে রিংটোন।
মা ফোন করছেন; ফিরতে হবে।

    "আমি চললেম একা" ......



কবি স্বীকৃতি :

কবিতায় দ্বৈত কোটেশনে থাকা অংশগুলো রবি ঠাকুরের ‘পত্রপুট’ ভুক্ত কবিতা “হঠাৎ দেখা” থেকে ধার করা। গানটা ও রবিবাবুর “মাঝে মাঝে তব দেখা পাই “। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বাঙালির প্রেম কখনো রবিবাবুকে ছাড়া হতে পারে না । তাই ওঁর ই একটা অনবদ্য প্রেমের কবিতার আদলে একটা তিমিরান্ধ চেষ্টা

কবি :অরিন্দম সরকার

NO COMMENTS

Leave a ReplyCancel reply

Exit mobile version